শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

সুখী হওয়ার পাঁচটি উপায়

হারুন উর রশিদ

‘বিজ্ঞানে এটা প্রমাণ হয়েছে যে সুখী হতে হলে সচেতন প্রচেষ্টার প্রয়োজন,’ বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান এবং কগনিটিভ বিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক লরি স্যান্টোস।

তিনি বলেছেন, ‘এটা খুব একটা সহজ কাজ নয়, এজন্যে সময় লাগবে।’ তবে তিনি হয়তো জানেন যে সুখী হতে হলে কি করতে হবে? কারণ তিনি পড়ান ‘মনোবিজ্ঞান ও সুন্দর জীবন’ বিষয়ে। খবর-বিবিসি
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১৬ বছরের ইতিহাসে তার ক্লাস শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়।
ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১২,০০। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি রেকর্ড।
ইতিবাচক মনোবিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে এই কোর্সটি পরিচালনা করেন অধ্যাপক স্যান্টোস। এটা মনোবিজ্ঞানেরই একটি শাখা যেখানে সুখ এবং আচরণগত পরিবর্তনের বিষয়ে পড়ানো হয়।
তিন্তু এসব তত্ত্ব আমরা কিভাবে আমাদের প্রতিদিনের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারবো?
‘সুখী হওয়া বিষয়টি এমন নয় যে এটা আপনা আপনি হয়ে যায়। সুখী হওয়ার জন্যে আপনাকে এটা চর্চ্চা করতে হবে,’ বলেন অধ্যাপক স্যান্টোস, ‘এটা অনেকটা ভালো সঙ্গীত শিল্পী বা ক্রীড়াবিদ হয়ে উঠার মতোই, সাফল্যের জন্যে তাদেরকে যেমন চর্চ্চা করতে হয় সুখী হওয়ার ব্যাাপরেও আপনাকে সেটা করতে হবে।’
কিভাবে সুখী হতে হবে তার কিছু কলাকৌশল তিনি শিক্ষার্থীদের শেখান সপ্তাহে দুদিন।
আপনি সুখী হতে চান কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আপনি তো আর ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছেন না? এখান তার দেওয়া পাঁচটি টিপস তুলে ধরা হলো। চর্চ্চা করার চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
১. কৃতজ্ঞতার একটি তালিকা তৈরি করুন
অধ্যাপক স্যান্টোস তার শিক্ষার্থীদের বলেন, প্রত্যেক রাতে তারা যাদের কাছে বা যেসব জিনিসের কাছে কৃতজ্ঞ তার একটি তালিকা তৈরি করতে।
‘এটা শুনতে খুব সহজ মনে হতে পারে, কিন্তু আমরা দেখেছি যেসব শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে এটা চর্চ্চা করেন তাদের সুখী মনে হয়,’ বলেন অধ্যাপক স্যান্টোস।
২. আরো বেশি করে ও নিশ্চিন্তে ঘুমাতে চেষ্টা করুন
এই কাজটা করা সবচেয়ে সহজ বলে মনে হয় কিন্তু আসলে এই কাজটা করা খুব কঠিন, বলেন তিনি।
এখানে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, প্রতি রাতে আট ঘন্টা করে ঘুমানো। এবং এই কাজটা করতে হবে এক সপ্তাহ ধরে।
অধ্যাপক স্যান্টোস বলেন, ‘আমরা সবাই জানি যে বেশি ঘুমাতে পারলে এবং নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারলে বিষণ্নতায় ভোগার সম্ভাবনা কম থাকে। এর ফলে ইতিবাচক মনোভাবও তৈরি হয়।’
৩. ধ্যান করুন
আপনার কাজ হবে প্রত্যেকদিন ১০ মিনিট করে মেডিটেট বা ধ্যান করা।
অধ্যাপক স্যান্টোস বলেন, তিনি যখন ছাত্রী ছিলেন তখন তিনি নিয়মিত ধ্যান করতেন এবং দেখেছেন সেটা করলে মন ভালো থাকে।
এখন তিনি একজন অধ্যাপক, এখন তিনি তার শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছেন কিভাবে ধ্যান করতে হয়। তিনি বলেন, এধরনের কাজে পূর্ন মনোযোগ দিতে হয় যা মানুষকে সুখী হতে সাহায্য করতে পারে।
৪. পরিবার ও বন্ধুদের সাথে আরো সময় কাটান
অধ্যাপক স্যান্টোস বলেছেন, গবেষণায় পরিষ্কার একটি বিষয় দেখা গেছে- পরিবার ও বন্ধুদের সাথে ভালো সময় কাটালে আপনি সুখী হবেন।
আপনার যদি ভালো বন্ধুত্ব থাকে এবং সামাজিক যোগাযোগ থাকে এবং তাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ হয় তখন তারা উল্লেখযোগ্য রকমের ভালো বোধ করেন।
এজন্যে যে খুব বেশি কিছু করতে হবে তা নয়, স্যান্টোস বলেন, "শুধু এটা নিশ্চিত করুন যে আপনি এই সময়ে বেঁচে আছে, মনে করুন যে আপনারা একসাথে বর্তমান সময় কাটাচ্ছেন এবং আপনি কিভাবে আপনার সময় কাটাচ্ছেন সেবিষয়ে একটু সচেতন থাকুন।"
তিনি বলেন, আপনার সুখী হওয়ার জন্যে সময় সম্পর্কে আপনার ধারণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
‘আমাদের কতো অর্থ আছে সেটা দিয়ে আমরা প্রায়শই আমাদের সম্পদের হিসাব করি। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, সম্পদ হচ্ছে আসলে আমাদের হাতে কতো সময় আছে সেটার সাথে সম্পর্কিত,’ বলেন তিনি।
৫. সোশাল মিডিয়ায় যোগাযোগের পরিবর্তে বাস্তবে এই যোগাযোগ বৃদ্ধি করুন
অধ্যাপক স্যান্টোস মনে করেন, সোশাল মিডিয়া থেকে সুখের বিষয়ে মিথ্যা যেসব ধারণা পাওয়া যায় সেসবে ভেসে যাওয়া উচিত নয়।
‘সবশেষ গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ইন্সটাগ্রামের মতো সামাজিক নেটওয়ার্কের মাধ্যম ব্যবহার করেন তারা, যারা এটা খুব বেশি ব্যবহার করেন না তাদের চাইতে কম সুখী,’ বলেন তিনি।
তো, এখন তো সব জানা হয়ে গেলো।
আপনি যদি সত্যিই জীবনে সুখী হতে চান, তাহলে কৃতজ্ঞ হতে শুরু করুন, পরিবারের সাথে আরো বেশি সময় কাটান, বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করুন, দিনের একটা সময়ে কিছুক্ষণের জন্যে নিজেকে সবকিছু থেকে সরিয়ে ধ্যানে মগ্ন হউন, সোশাল মিডিয়া থেকে দূরে সরে এসে আরো একট বেশি ঘুমাতে চেষ্টা করুন।
ইয়েলের শিক্ষার্থীদের জন্যে যদি এটা কাজ করে, তাহলে এসব পরামর্শ আপনার ক্ষেত্রেও নিশ্চয় কাজ করবে।
colected

শনিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৮

যিশু ঈশ্বরের পুত্র এবং তিনিই ঈশ্বর-এই ধারণা আমাকে সন্তুষ্ট করেনি’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
 আমি ২০১৭ সালের অক্টোবরে ইসলামে ধর্মান্তরিত হই। আমি ক্যাথলিক হিসেবে বড় হয়েছি এবং আমি ছিলাম একজন গোঁড়া ক্যাথলিক। আমি খ্রিস্টধর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেয়ার মাধ্যমে এ বিষয়ে শিক্ষা দিতাম এবং চার্চে খুবই সক্রিয় ছিলাম।
এই সময়ে আমার জীবন সম্পর্কে আমার মনে নানা প্রশ্নের জন্ম নিতে শুরু করে এবং আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেতে চার্চের শরণাপন্ন হই এবং এই কারণে আমি সেখানে অনেকের প্রতিরোধের সম্মুখীন হই।
চার্চ থেকে বাধার সম্মুখীন হওয়ায় আমি কিছু দিন সময় নিয়ে বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে জানার সিদ্ধান্ত নেই। আমি ইহুদি ধর্ম, হিন্দুধর্ম, তাওবাদ, জৈন ধর্ম এবং অবশেষে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে গবেষণা করি।
ইসলাম গ্রহণ করার পর আমার জীবনে ভিন্নতা আসে। এ পর্যন্ত আমার জীবনে পাওয়া সবচেয়ে সুন্দর জিনিসগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আমার ইসলাম গ্রহণ। একই সঙ্গে এটি আমার জন্য তার নিজের ‘কষ্টের ন্যায্য পাওনা’ নিয়ে এসেছে। আমার পরিবার ইসলাম গ্রহণ করেনি। তাই তারা আমার সঙ্গে কথা বলেন না এবং ফলস্বরূপ, তারা আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে।
চাকরি হারিয়ে আমাকে কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। অর্থের অভাবে আমাকে আমার কলেজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে। আমি ছিলাম কলেজের সেরা ছাত্রীদের মধ্যে একজন।
জীবনে কোনো কিছুই স্থিতিশীল নয়। আপনার অনেক টাকা থাকতে পারে, আপনার কাজ থাকতে পারে, আপনার পারিবার থাকতে পারে, আপনার অনেক কিছুই থাকতে পারে এবং এগুলো একসময় চলেও যেতে পারে। কিন্তু ধর্ম সবসময়ই স্থায়ী একটি জিনিস যা আপনার কাছে আছে। সুতরাং, আপনার জীবনে কোনো কষ্ট বা অসুবিধা নেমে আসলে আপনার উচিৎ হবে তাৎক্ষণিক আপনার ঈশ্বরের কাছে যাওয়া।
প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য চার্চে গেলাম এবং বলা হলো যে, ‘ঈশ্বর এভাবেই বলেছেন এবং তা নিয়ে আমাদের এই প্রশ্ন করা উচিত নয়’। এটা এমন কিছু যা আসলেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদি আমার উত্তর প্রয়োজন হয়, তাহলে আমি এর জন্য কোথায় যাব?
মূল দ্বন্দ্ব হচ্ছে যে আপনি ‘ট্রিনিটি’তে বিশ্বাস করেন (খ্রিস্ট ধর্মে এক ঈশ্বর হিসাবে: পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মাকে ট্রিনিটি বলে) এবং যিশু ঈশ্বরের পুত্র এবং তিনিই হচ্ছেন ঈশ্বর। আপনি যখন বিষয়টি একটু গভীরভাবে চিন্তা করবেন, তখন আপনার কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, এটি আসলেই কোনো অর্থ তৈরি করে না।
ইসলাম সম্পর্কে দীর্ঘ সময় নিয়ে আমি অধ্যয়ন করেছি। ইসলাম সম্পর্কে আমার ভিতরেও অনেক ভুল ধারণা ছিল এবং এক পর্যায়ে আমি মুসলমানদেরকে ঘৃণা করতাম। আমি মনে করতাম যে সকল মুসলমানদের মরে যাওয়া উচিৎ এবং মুসলমানদের অস্তিত্ব থাকা উচিৎ নয়, তাদেরকে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো দরকার। ইসলাম নিয়ে আমার মতো এই ধারণাটি আমেরিকায় খুবই সাধারণ একটি ধারণা। কিন্তু এটি ছিল আমার নিজের অজ্ঞতা।
আমি প্রায়ই একটি উদ্ধৃতি দিয়ে থাকি আর তা হচ্ছে, ‘সত্যের পথের জন্য ভয় পাওয়া উচিৎ নয়’। এটি এমন কিছু জিনিস যা খুবই শক্তিশালী। যদি আমার কোনো পরিবার না থাকে, যদি আমার কোনো বন্ধু থাকে না, যদি আমার সবচেয়ে বড় বাড়ি থাকে কিংবা কোনো বাড়ি না থাকে, যদি আমার কাছে বিশ্বের সব টাকা থাকে কিংবা কোনো টাকা না থাকে ... এর সবই ঠিক আছে কারণ আমার কাছে আল্লাহ রয়েছেন।
আল্লাহর সঙ্গে আমার সম্পর্ক এবং তার সান্নিধ্যে আসা নিয়ে আমি চিন্তা করতে পারি এবং ইনশাল্লাহ, আমি অবশ্যই জান্নাতে তাকে দেখতে পাব।
https://www.youtube.com/watch?v=jhMpDLbO1Go#action=share
অ্যাবাউট ইসলাম অবলম্বনে